December 11, 2024

বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স বাতিলপূর্বক সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারা?

ভারতীয় অলাভজনক সংস্থাগুলির বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স বাতিল সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলছে মূলত সেই সংস্থার কর্মচারী, সংস্থা থেকে উপকৃত মানুষজন, এবং অবশ্যই সমগ্র বৃহত্তর সমাজের ওপর।

Read article in Hindi
9 min read

২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে যখন এদেশে ৭0 টি নবীন কর্মসংস্থা ১৭,000 কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে, যার মধ্যে বাইজু’স শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫০০ কর্মী রয়েছেন| এই পরিস্থিতিতে চাকরি হারানো কর্মচারী, সংস্থাগুলির হালহকিকত এবং সর্বোপরি অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটা তা নিয়ে বহু সংবাদমাধ্যম এবং ডিজিটাল সংবাদ সংস্থা অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের ওপর মনোনিবেশ করেছে।

অন্যদিকে, ৭ মাসের মধ্যে ১০০ ও বেশি অলাভজনক সংস্থাও তাদের বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স হারিয়েছে। কেয়ার (CARE) নামক সংস্থা, যা ভারতে কর্মরত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অলাভজনক সংস্থা, প্রায় ৪০০০ কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে| এটি তুলনামূলকভাবে বাইজু’স শিক্ষা-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত ২৫০০ কর্মী থেকে অনেকাংশে বেশি। তা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা অনুপস্থিত|

অলাভজনক কর্মসংস্থান দেশের ঘরোয়া উৎপাদন প্রক্রিয়াতে (GDP) 2% অবদান রাখে; অলাভজনক সংস্থাগুলির অস্তিত্ব এবং কর্মক্ষমতা, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের (যাদের মধ্যে বেশীরভাগ কর্মী ছোট শহর বা গ্রামে কর্মরত ছিলেন) ওপর এই চাকরি হারানোর অকল্পনীয় নেতিবাচক প্রভাব এবং সর্বোপরি, শত শত অসহায় পরিবার যারা সংস্থা থেকে গুরুত্ত্বপূর্ণ সাহায্যলাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, প্রভূত বিষয় নিয়েও কোনোরকম আলোকপাত করা হচ্ছে না।

অদৃশ্য কর্মসংস্থান

পরিসংখ্যান এবং যোজনা বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়ের (Ministry of Statistics and Programme Implementation, MoSPI) ২০১২ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নাগরিক সমাজ সংগঠন (সিভিল সোসাইটী অর্গানাইজেসন) দ্বারা নিযুক্ত কর্মচারীর সংখ্যা ২৭ লক্ষ এবং ৩৪ লক্ষ কর্মী পূর্ণ সময়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত| তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে অনেকাংশেই অধিক কর্মসংস্থান উৎপাদনকারী। কোয়ালিশন @৭৫ নামক এক নাগরিক সমাজ সংগঠন দ্বারা পরিচালিত এবং গাইডস্টার ভারত নামক সংস্থা দ্বারা সঞ্চালিত এক নিরীক্ষণে ৫১৫ অলাভজনক সংস্থার মধ্যে ৪৭ শতাংশ সংস্থা জানিয়েছে যে তারা যে ভৌগলিক এলাকায় কাজ করে, তার অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাদের সংস্থাই সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান উৎপাদনকারীর ভূমিকা পালন করে।

What is IDR Answers Page Banner

তদুপরি, অলাভজনক সংস্থাগুলি সরকার এবং মানুষের মধ্যে সংযোগকারী রূপে কাজ করে। এদেশে কর্মরত অলাভজনক সংস্থাগুলির মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি কাজ করে এলাকাভিত্তিক ভাবে গ্রামে গঞ্জে এবং সেই সমস্ত জেলায় যেখানে এদের প্রয়োজন সর্বাধিক। এই সংস্থাগুলির কাজ মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি, জীবিকা, জল ও শৌচস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, এবং প্রতিবন্ধকতা ও তা সম্বন্ধীয় নাগরিক সচেতনতা সংক্রান্ত – যা নাগরিক জীবনের একাধিক দিককে মাথায় রেখে কাজ করে। এসব সংস্থাগুলি স্থানীয় জীবিকা উত্‍পাদন, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করার সঙ্গে একাধারে সামাজিকস্তরে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের প্রচার এবং স্থানীয় ব্যবসার পরিপোষণ করে। নিরীক্ষণে অংশগ্রহণকারী অর্ধেক সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের (বিদ্যালয়, পঞ্চায়েত, পৌরসভা, অঙ্গনওয়াড়ি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র) এবং স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তাদের লক্ষ্য, এই সকল মানুষ এবং বিভাগকে শক্তিশালী করে তোলা ও স্থানীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।

অলাভজনক সংস্থাগুলির কাজ ব্যবসা এবং সরকারী কাজের থেকে চরিত্রগতভাবে পৃথক। এক অলাভজনক সংস্থার পরিচালকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “একজন অলাভজনক সংস্থার কর্মীর ভূমিকা হল সামাজিক পরিবর্তন আনা, যেটা শুধুমাত্র কাজের পরিসীমায় সীমাবদ্ধ নয়।” তাঁর কথা অনুযায়ী, “একজন সমাজকর্মী যখন চাকরি হারান, তার সঙ্গে একাংশের প্রান্তিক ও সংবেদনশীল মানুষদের উন্নয়নের সুযোগও হারিয়ে যায়।“

সমাজে এর সরাসরি এবং উল্লেখযোগ্য প্রভাব

বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স বাতিল হবার কারণে সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড বর্তমানে স্থগিত হয়ে গিয়েছে। শিশু সুরক্ষা, টীকাকরণ , নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতিরোধ, বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পৌষ্টিক সুযোগসুবিধার বিধান, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠ্যক্রম তৈরি, বাবা-মা দের সঙ্গে তাদের সন্তানের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা, যুবসমাজ কে জীবিকা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ প্রদান করা, সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প ও যোজনার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া – এই সমস্ত কাজগুলি সেই সকল অঞ্চলে কার্যত বন্ধ যেখানে বর্তমানে লাইসেন্স হারানো এই সংস্থাগুলি কাজ করত। তথ্য অনুযায়ী, লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়া সংস্থাপিছু ৪ হাজার থেকে ৮ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যা সংস্থাগুলি তাদের পেতে মধ্যস্থতা করত।

শুধুমাত্র কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াই নয়, এর পরিণতি হিসেবে একটি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে বেড়ে ওঠা গঠনতন্ত্র ভেঙে পড়েছে – যা এই অলাভজনক সংস্থার কর্মীরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বছরের পর বছর ধরে কাজ করার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন; সামাজিক সক্ষমকারী হিসেবে কাজ করে চলা সংস্থাগুলির প্রতি মানুষের আস্থা আজ বিধ্বস্ত।

এক বৃহৎমাপের অলাভজনক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষায় – “এটি শুধুমাত্র একটি সংস্থার কাজের ইতি নয়; মানুষ মনে করছেন তাঁরা আমাদের দ্বারা পরিত্যক্ত। পরবর্তীতে যখন আমরা আবার গিয়ে বলব যে আমরা যথাযথ সাহায্য প্রদান করার অঙ্গীকার নিচ্ছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, তারা কী করে আবার আমাদের বিশ্বাস করবেন?” তিনি আরো জানান যে তার মতানুযায়ী এই হারানো বিশ্বাস পুনঃঅর্জন করা খুব কঠিন।

donate banner

অদৃশ্য কর্মবাহিনী

একদিকে যেমন সাহায্যকাঙ্খি মানুষেরা আজ অসহায়, অন্যদিকে অলাভজনক সংস্থার অগ্রবর্তী কর্মীরা এবং তাদের পরিবারও যথেষ্ট প্রভাবিত। যে অগ্রবর্তী কর্মীরা এই পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে স্নাতক, এবং কিছু ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর। এই কর্মীরা সাহায্যপ্রার্থী জনসম্প্রদায়গুলির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, এবং অনেকেই তাদের কর্মক্ষেত্রের এলাকাগুলিতেই বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থানীয় পরিবেশ থেকেই তাদের জীবিকা এবং কর্মবল আহরিত হয়। এক অলাভজনক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতে, “এই কর্মীরাই এলাকার প্রথম সারির সংযোগ এবং সমন্বয়কারী; তাঁরা এই এলাকার পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে ঘনবদ্ধ এবং স্থানীয় মানুষের কাছে মূল্যবান।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “এর মানে এটাও যে এই কর্মচারীদের কাছে অলাভজনক সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ তাদের সেই সব এলাকায় টিকিয়ে রাখার জন্য, এবং অলাভজনক সংস্থাগুলির কাছে তাঁরা একই ভাবে জরুরি ওই এলাকায় টিকে থাকবার জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “যে এলাকায় গ্রামীণ জনসম্প্রদায় সমন্বয়কারীরা থাকেন, সেখানে জীবিকার সুযোগসুবিধা এমনিতেই খুবই কম। যদি উন্নয়নের অন্যান্য পথ, যেমন শিল্প এবং অন্যান্য জীবিকাগত সুযোগ সুবিধা এই এলাকায় পৌঁছত, তাহলে এই কর্মীদের অন্যান্য অনেক জীবিকা অর্জনের সুযোগ থাকতে পারত। আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছি যে বেশিরভাগ মানুষের জন্য সমাজসেবামূলক কাজ শেষ পছন্দ – ভালো মাইনে, ধারাবাহিকতা, এবং উপার্জনের নিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে তাঁরা সরকারী অথবা বেসরকারি চাকরি বেছে নেন। বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স বাতিলের কারণস্বরূপ তৈরী হওয়া কর্মহীনতা তাদের অলাভজনক সেবামূলক কাজের প্রতি অবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’’

A woman in a saree standing, waving to somebody_FCRA
বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) বাতিল ও আচমকা চাকরি হারানো অলাভজনক সংস্থাগুলিতে এক কর্ম সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। | ছবি সৌজন্যে: পাবলিক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল / সিসি বাই

কর্মহীন চাকরির বাজার

সীমা মুসকান একজন ৩৫ বছর বয়সী পাটনা নিবাসী সামাজিক গবেষক যিনি একটি অলাভজনক সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সীমা যে সংস্থায় কাজ করতেন সেটি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স হারায়, এবং এর ফলস্বরূপ তিনিও তাঁর চাকরি হারান। চাকরি হারানোর সঙ্গেই হারিয়ে যায় তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং স্বাবলম্বী পরিচয়।

সীমার মতে, “নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া একেবারেই সহজ নয়। সব সংস্থার বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্সই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। অন্যান্য সংস্থাগুলি মনে করছে যেকোনো মূহুর্তেই তারা লাইসেন্স হারাতে পারে। এই ভয় তাদের মধ্যে এত বেড়ে গেছে যে তারা নতুন লোক নিতেও সাহস পাচ্ছে না।”

সীমা মনে করেন, অন্যান্য বড় শহর যেমন ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়ে বড় সংস্থাগুলিতে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু সীমার পক্ষে পাটনা শহর ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয় কারণ তার স্বামী এবং পরিবারের লোকেরা পাটনাতে থাকেন। “আমার দুই সন্তান, একজনের বয়স ৫ অন্যজনের বয়স ৮। আমার পক্ষে তাদের ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে গিয়ে চাকরি করা সম্ভব নয়।”

সীমা বলেন, “যখন একজনের কাছে চাকরি থাকে, তার একটা নিজস্ব পরিচয় থাকে, সমাজে নিজস্বতার বোধ থাকে, থাকে স্বাধীনতা, নিজস্ব রোজগার এবং সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজের প্রত্যক্ষ অবদান।” সীমা নিজের রোজগারের অংশ দিয়েছেন তাদের পারিবারিক বাড়ির লোন শোধের জন্য, এবং তাঁর সন্তানের শিক্ষার্থে। এখন সীমা চিন্তিত এই ভেবে যে তাঁর কর্মহীনতা তাঁর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার ওপর কত বড় প্রভাব ফেলবে। সীমা জানান, “একজন তার নিজের খরচ অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারে, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয় ছোট করে ফেলতে পারে, কিন্তু যেটির ক্ষেত্রে সমঝোতা করতে পারে না তা হল সন্তানের শিক্ষার খাতে খরচ। আর এখন সেটাই আসন্ন সম্ভাবনা মনে হচ্ছে।”

যদিও সীমা মনে করেন তার পুরুষ সহকর্মীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। “আমার কাছে চাকরি না থাকলেও পরিবারে আমার স্বামীর ব্যবসাজনিত আয় আছে। আমার অনেক সহকর্মীদের জন্য এই পরিস্থিতি ভীষণভাবে নেতিবাচক কারণ তাঁরাই তাঁদের পরিবারের মুখ্য জীবিকাঅর্জক। তাঁদের পরিবার তাদের আয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।“

গাইড্স্টার ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, নিরীক্ষণে অংশগ্রহণকারী অলাভজনক সংস্থাগুলির মধ্যে ৬৪% জানিয়েছে যে তাদের কর্মচারীরা তাঁদের পরিবাবের একক উপার্জনকারী।

দিনেশ কুমারের সমগ্র কর্মজীবন সমাজকল্যাণমূলক কাজে কেটেছে। তার ১৮ বছরের কর্মজীবনে তিনি মূলত শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা ও পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ক কাজে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত কর্মক্ষেত্রে তার কাজ ছিল ৪০/৫০ টি সরকারী যোজনার সঙ্গে সাধারণ গরীব মানুষদের তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী সংযুক্ত করা।

দিনেশ বলেন, তার সংস্থা যে কাজ করে, খুব কম সংস্থা সেই কাজ করে থাকে। তাঁর মতে, এক নির্দিষ্ট ধরণের দক্ষতা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ লোকের অন্য ধরণের কাজ পাবার সুযোগ সীমিত। “আমার কর্মজীবন সামাজিক কাজেই কেটেছে। আমার ১৮ বছরের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমি জনসম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত কাজে দক্ষতা, তথ্য সংগ্রহে সহায়তা, বৃহৎ মাপের নিরীক্ষণমূলক কাজ সামলানো, এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মত দক্ষতা অর্জন করেছি। কিন্তু যদি অলাভজনক সংস্থাগুলি লোক নেওয়াই বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব? কী ভাবে বাঁচবো?”

অপরিসীমিত মানুষ, সীমিত চাকরি

অনেক অগ্রবর্তী কর্মীদের জন্যই চাকরির আবেদন করা এবং চাকরি পাওয়া এক কঠিন বিষয়। দিনেশ জানান, যদিও তিনি তার আবেদন পত্র সব জায়গায় পাঠাচ্ছেন, তবু তিনি জানেন কিছু পাবার সুযোগ খুবই কম। এদেশে কর্মহীনতা এখন অনেক বেশি। দিনেশের দক্ষতা খুবই সীমিতক্ষেত্রের হওয়ায় তাঁর আবেদন পত্র বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও সংস্থা গ্রাহ্য করে না। যে সংস্থা গুলি তার দক্ষতা থেকে লাভবান হতে পারে, তারা কেউই নতুন পদে নিয়োগ করছে না, অথবা সেখানে ইতিমধ্যেই অন্যান্য অনেকে আবেদন করে রেখেছেন।

তদুপরি, অনেকের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট কঠিন। মুকেশ কুমার, কেয়ার সংস্থার জেলা অ্যাকাডেমিক ফেলো, তার চাকরি হারান ২০২৩ সালের জুন মাসে। ১২ বছর আগে একজন স্বল্প বেতনের কর্মী হিসাবে চাকরি শুরু করা মুকেশ বর্তমানে জেলা কোর্ডিনেটরের পদে উন্নীত হয়েছিলেন।

মুকেশ ডেভনেট এবং লিঙ্কডইনের মাধ্যমে তাঁর পরিসরে তাঁর চাকরির প্রয়োজনের বিষয়ে জানিয়েছেন, এমনকি গুগলের মাধ্যমেও তাঁর জেলায় চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু সমস্যা আরও বেড়ে যায় কম্পিউটার ও ল্যাপটপের সীমিত লভ্যতার জন্য। মুকেশ জানিয়েছেন, “যদিও প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে এবং তা যথেষ্ট সহজলভ্য, কিন্তু আমি এখন একটি ল্যাপটপ কিনতে অক্ষম। এর ফলস্বরূপ যখন কোনো সংস্থা লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র পাঠায়, আমাকে হয় সেটা ফোনে টাইপ করতে হয় যেটা অত্যন্ত কষ্টকর, নাহলে পাতায় হাতে লিখে, স্ক্যান করে সেই ইমেইল অ্যাড্রেস এ পাঠাতে হয়।”

দিনেশ আরও জানান যে তিনি সমাজকল্যাণমূলক কাজেই আগ্রহী, যদিও আদতে তিনি মনে করছেন সেই সুযোগ তিনি আর নাও পেতে পারেন। দিনেশের কথায়, “সরকারী এবং বেসরকারি চাকরির মতন আমাদের এই কাজে টাকা জমানোর সুযোগ থাকে না। আমার সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতে খুবই ভালো লাগে; ভালো লাগে জনসম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, প্রান্তিক মানুষদের সাহায্য করতে, এবং তাদের যোগ্য অধিকার তাদের পাইয়ে দিতে। আমি সেই কাজ আরও করতে চাই যার মাধ্যমে সমাজে আমি কোনো অবদান রাখতে পারি, কিন্তু বর্তমানে আমার কাছে সেই সুযোগ আর নেই।”

জনসম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজের গভীর বিশ্বাস এবং সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে মুকেশ জানান, “আমরা পরিবারগুলির সঙ্গে খুব কাছ থেকে কাজ করি, যাতে তারা জানতে পারে স্কুলে কী হচ্ছে, তাদের বাচ্চারা ভাল শিক্ষা পাচ্ছে কিনা। শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যাগুলো আমরা জানি, তাই আমরা সরকারী কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিই, বাবা মা ও শিক্ষক, শিক্ষিকাদের মধ্যে বার্তালাপ করিয়ে দিতে সাহায্য করি, বাবা মায়েদের বোঝাই তাঁদের সন্তানের প্রতি কেমন ব্যবহার করা উচিত, ইত্যাদি। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে কারণ তারা জানে যে আমরা এগুলি জনহিতের জন্যই করি।“

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কী?

যে সমস্ত বৃহৎ সংস্থাগুলি নিজেরাই প্রকল্প বাস্তবায়িত করে, যাদের নিজস্ব পরিকাঠামো আছে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল, সেগুলি ছাড়া বেশীরভাগ সংস্থাই নিজেদের সাহায্য নিজেরা করতে পারে না, কারণ, প্রথমত তাদের নিজেদের সম্পদ সীমিত হওয়ায় তারা আর্থিক ভাবে দুর্বল, এবং দ্বিতীয়ত তারা নিজেদের বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স হারানোর ভয়ে সর্বদা ত্রস্ত কারণ তারা জানে যে তাদের নিজেদের কর্মচারী এবং প্রান্তিক মানুষদের ওপর এর প্রভাব কত গভীর হতে পারে। দিনেশ এর সঙ্গেই জানান, তার আশেপাশের লোকেরা তাঁকে ব্যবসা করার উপদেশ দিয়েছে। তাঁর বয়ানে, “ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় নেবে। আমার এখন ৪০ বছর বয়স। ব্যবসায় সফলতা আসতে আসতে আমার বয়স ৫০ বছর হয়ে যাবে। এই মধ্যবর্তী সময়টা আমি কী ভাবে চালাব, যখন আমার সন্তানরা বড় হচ্ছে এবং সমস্ত দিকেই খরচ বাড়ছে?”

মুকেশের জন্য পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে পড়েছে যে বিগত কিছু সপ্তাহ তাকে যন্ত্র কারিগরের কাজ পর্যন্ত করতে হচ্ছে। সীমা এবং দিনেশের মত তারও শিক্ষাক্ষেত্র, প্রশিক্ষণ প্রদান, সম্পর্ক তৈরি করা এবং সামাজিক সংযোগে বিপুল দক্ষতা আছে, যার বেশিরভাগই এখন মুকেশের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। “বন্ধুদের কাছে আমি কৌতুকের পাত্র হয়ে উঠেছি,” মুকেশ জানান, “কিন্তু আমার কাছে আর উপায়ই বা কী আছে? আমার এখন ৩৫ বছর বয়স। আমার স্ত্রী আছে, তিন সন্তান আছে, বয়স্ক নির্ভরশীল বাবা মা আছেন। আমি চাকরি করে মাসে হাতে ২১,৫০০ টাকা পেতাম। বিগত কয়েক মাস আমি কর্মহীন। আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, এবং আমার হাতে আর কোনো টাকা পয়সা নেই। ভবিষ্যত্‍ এখন আমার খুবই অন্ধকার লাগে।

“গ্রামীণ জনসম্প্রদায়ের সাথে ওতপ্রোত ভাবে কাজ করা এক বৃহৎ মাপের সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জানান, বিপুল পরিমাণ সংস্থা তাদের বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) লাইসেন্স হারানোর ফলস্বরূপ যে পরিমাণ চাকরি গেছে, তাতে মানুষের সমাজকল্যাণমূলক কাজের বাইরে চাকরি খোঁজার সম্ভবনাই অধিক। “আমার ভয় হয় যে বড় বড় সংস্থা গুলি অগ্রবর্তী কর্মীদের এই দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতির সুযোগ নেবে ও তাঁদের সোনা এবং অন্যান্য ঋণের জন্য পুনরুদ্ধারকারী কর্মী হিসেবে কাজের প্রস্তাব দেবে। তাঁরা যে জনসম্প্রদায়ের মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছেন, তার সদ্ব্যবহার করে এই সংস্থাগুলি টাকা পুনরুদ্ধার করার কাজে লাগবে – যা এই সকল অগ্রবর্তী কর্মীদের এতদিন যাবৎ করে আসা কাজের একেবারে বিপরীত।”

দেশের অবনতির অনুঘটক

দিনেশ জানান, যে সংস্থার হয়ে তিনি এতদিন কাজ করে এসেছেন সেই ধরনের সংগঠনগুলি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছে। “আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে তাঁরা তাঁদের অধিকার এবং ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বৃত্তি থেকে শুরু করে বিধবা ভাতা, বা শিশুর জন্মপত্র তৈরী, যেকোনো ক্ষেত্রেই আমরা তাদের সাহায্য করতে পিছপা হইনি। আমাদের অনুপস্থিতিতে এই মানুষদের তাদের ন্যায্য অধিকার পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে কারা সরব হবে?” দিনেশ আরও জানান, “আমাদের চুপ করিয়ে দিয়ে এরা সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ করে দিলো।“

মুকেশের কথায়, মানুষ তাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। সে জানায়, “ওরা জানত আমরা ওদের হিতার্থে কাজ করি। ওরা আমাদের ওপর ভরসা করত যে আমরা ওদের ন্যায্য পাওনা পেতে সাহায্য করব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর বিষয় উত্থাপিত হলে আমরা তাঁদেরই সন্তানের স্বার্থের কথা ভাববো। আমরা সরকার ও তাঁদের মধ্যে এক সেতুর ন্যায় কাজ করবো।”

এক অলাভজনক সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের কথায়, “যখনই আপনি জনসম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগকারী এই কর্মীদেরকে হারাতে শুরু করেন, তখনই আপনি প্রান্তিকশ্রেণীর মানুষদের দৃশ্যমানতাকে আরো লঘু করে তোলেন।” তিনি বলেন, “এই অলাভজনক সংস্থা আর তার কর্মীরা দুর্বল জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে, তাদের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য প্রচারের মঞ্চ প্রদান করে, এবং তার সঙ্গে সরকারের প্রচেষ্টাগুলিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এদেশে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এদের ছাড়া সক্রিয় নাগরিকতা বলে কিছুই থাকবে না এবং আমরা সেই সময়ে প্রত্যাবর্তন করব যেখানে সাধারণ ও দুর্বল মানুষের কথা বলার কোনো অধিকার ছিল না। সুতরাং, ২০৪৭-এ এই দেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে দেখার পরিবর্তে আমরা আরও ২৫ বছর পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে দেখব।”

এই প্রবন্ধটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে একটি অনুবাদ টুলের মাধ্যমে; এটি এডিট করেছেন স্বাগতা সেন ও রিভিউ করেছেন কৃষ্টি কর।

Footnotes:

  1. ২৩শে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য।
  2. একটি অলাভজনক সংস্থার একজন অগ্রবর্তী কর্মী সংযোগ গড়ে তোলেন অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টি পরিবারের সঙ্গে, যার প্রতিটিতে ৪ থেকে ৫ জন করে সদস্য বিদ্যমান। যে কোনও সময়ে যে কোন স্থানে ক্ষুদ্র অলাভজনক সংস্থাগুলি গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনসম্প্রদায় সংগঠনকারী ও বৃহৎ সংস্থা গুলি যেমন এসটিসি, ৬০০ থেকে ৮০০ অগ্রবর্তী কর্মীদের সঙ্গে কাজ করে। কেয়ার-এর ন্যায় বৃহত্তর সংস্থায় প্রায় ৪০০০ অগ্রবর্তী কর্মী কাজ করেন।

আরও জানুন

  • গত পাঁচ বছরে সরকারের দ্বারা বাতিলকৃত লাইসেন্সের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন
  • বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) সংশোধনী এবং তাদের প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন বা এই Instagram লাইভটি দেখুন
  • FCRA লাইসেন্সের বাতিল সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন

We want IDR to be as much yours as it is ours. Tell us what you want to read.
লেখক সম্পর্কে
স্মারিনিতা শেঠি-Image
স্মারিনিতা শেঠি

স্মারিনিতা শেঠি IDR-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। IDR-এর আগে, স্মারিনিতা দাসরা, মনিটর ইনক্লুসিভ মার্কেটস (এখন FSG), জেপি মর্গান এবং দ্য ইকোনমিক টাইমস-এ কাজ করেছেন। তিনি নেটস্ক্রাইবস-ভারতের প্রথম নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং ফার্মও সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্মারিনিতা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএ এবং ফাইনান্স-এ এমবিএ করেছেন, উভয়ই মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

COMMENTS
READ NEXT