READ THIS ARTICLE IN

আমি রাজস্থানের বিকানের জেলার লূণ অঞ্চলের নৌখা দাইয়া গ্রামের একজন কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কারণে আমাদের জমি ও জীবিকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার বিশাল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করছে এবং সেই সব এলাকায় বিপুল সংখ্যায় গাছ কাটা হচ্ছে। এর মধ্যে যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো রাজস্থানের রাজ্য গাছ—খেজরি বা শমী।
খেজরি বা শমী কোনো সাধারণ গাছ নয়। এটি মরুভূমিটির পরিচয় এবং এখানকার জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি এর ছায়ায় বড় হয়েছি, আমি জানি, শুষ্ক আবহাওয়াতেও এই গাছ কীভাবে মাটির উর্বরতা বাড়ায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গবাদি পশুর জন্য খাবার জোগায়। এর পাতা উট, ছাগল ও ভেড়ার প্রিয় খাদ্য। গ্রামগুলিতে পশুপালন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা স্থানীয় অর্থনীতির ভিত্তি।
এ ছাড়া, খেজরি গাছের ফল ‘সাংরি’ শুকনো তরকারি বানাতে ব্যবহৃত হয়, যা এখানকার খাবারের অপরিহার্য অংশ। এই গাছের ধর্মীয় গুরুত্বও রয়েছে। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে শমী একটি পবিত্র গাছ। প্রতিটি উৎসব, আনন্দ এবং শুভ অনুষ্ঠানে এই গাছের প্রয়োজন অপরিহার্য, কিন্তু আজ এই গাছ একপ্রকার বিলুপ্তির মুখে।
গত চার বছর ধরে, আমরা নিয়মিত খেজরি বা শমী গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি, কিন্তু সরকারের উদাসীনতা এবং কোম্পানিগুলোর চাপের কারণে গাছ কাটা থামেনি। এইভাবে অরণ্য নিধনের ফলে পশ্চিম রাজস্থানে তাপমাত্রা বেড়েছে, বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। মরু শিয়াল, খরগোশ, এবং ময়ূরের মতো স্থানীয় পশুপাখি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং এখন এগুলিও কম দেখা যায়।
খেজরি বা শমী গাছের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দেশীয় গাছ যেমন বাবলা, জীবন, কাঠ শিমুল, পিলু, অশ্বত্থ, নিম, ইউক্যলিপ্টাস, শিশু ও কেলেকোঁড়ার মতো গাছও সৌর প্রকল্পের জন্য জমি খালি করতে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আমাদের কাছে, এটি শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়—এটি আমাদের অর্থনীতি ও জীবিকার সংকটও বটে। কৃষিজ আয় কমছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলের অভাবে চিনাবাদাম ও ধানের মতো ফসলের উৎপাদন কমছে। চাষিরা আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন, মজুরি ও ভবিষ্যতে জমির দাম নিয়েও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর পাশাপাশি, এই প্রকল্পগুলোর কারণে চারণভূমিও কমে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় তৃণভূমি ও চারণভূমির অভাবে পশুপালন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অরণ্য নিধনের পাশাপাশি এই অঞ্চলে জল সংকটও আরও তীব্র হচ্ছে। রাজস্থানে এমনিতেই জলের অভাব রয়েছে, তার ওপর এখন সোলার প্যানেলের ধোয়া-মোছার জন্য বিপুল পরিমাণ জল ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের পুকুর ও খাল থেকে হাজার হাজার লিটার জল এই কাজে নষ্ট হচ্ছে—যে জল চাষ বা পান করার কাজে ব্যবহার করা যেত।
আমরা এই বিষয়ে একমত যে সৌর শক্তি জরুরি, কিন্তু কীসের বিনিময়ে? এর মূল্য যেন আমাদের শিকড় উপড়ে, জমি কেড়ে নিয়ে বা আমাদের সংস্কৃতি মুছে দিয়ে না হয়।
কিশনারাম গোদারা রাজস্থানের বিকানের জেলার একজন কৃষক।
—
আরও জানুন: রাজস্থানের জয়সলমের জেলায় কীভাবে সৌর প্রকল্প ওরান এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করছে, সে সম্পর্কে পড়ুন।
এই নিবন্ধটির অনুবাদ এবং রিভিউ করেছে Shabd AI।