রাজেন্দ্র সিং রাজস্থানের আলওয়ারের একজন জল সংরক্ষণবাদী এবং পরিবেশবাদী। তিনি 2001 সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার এবং 2015 সালে স্টকহোম ওয়াটার পুরস্কার জিতেছিলেন, যা পানির জন্য নোবেল পুরস্কার হিসাবেও পরিচিত। তিনি তরুণ ভারত সংঘ (টিবিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা, 45 বছর বয়সী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যারা বৃষ্টির জল সংগ্রহের জন্য জোহাদ 1 এবং অন্যান্য জল সংরক্ষণ কাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে গ্রামগুলিকে স্বনির্ভর করে তুলতে কাজ করছেন। রাজেন্দ্র জল-সম্পর্কিত সংস্থাগুলির একটি জাতীয় সমষ্টিতে পরামর্শ দেন, যাকে বলা হয় রাষ্ট্রীয় জল বিরাদরি, যেটি ভারতে 100 টিরও বেশি নদীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কাজ করেছে।
IDR-এর সাথে এই সাক্ষাত্কারে, তিনি প্রতিফলিত করেছেন কোন কোন কারণ তাকে জল সংরক্ষণে কাজ করতে প্ররোচিত করেছে, একটি গ্রামের সত্যিকারের আত্মনির্ভরশীলতা কেমন দেখায় এবং কীভাবে মহামারীটি উন্নয়নের কিছু বিপর্যয়কর প্রভাবকে বিপরীত করতে সক্ষম হচ্ছে।
আপনি সাহিত্য এবং আয়ুর্বেদ অধ্যয়ন করেছেন, কী কারণে আপনি জল এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে কাজ শুরু করলেন?
আমি 1985 সালে আলওয়ারের গোপালপুরা গ্রামে আসি, তখন অপুষ্টির কারণে এখানে রথন্ডি (রাত্রান্ধত্ব) নামক একটি রোগ দেখা দেয়। তাই আমি এর চিকিৎসা শুরু করলাম। শীঘ্রই, আমি বুঝতে পারি যে সম্প্রদায়টি শিক্ষিত নয়, তাই আমি একটি স্কুল চালু করলাম। সাত মাস ধরে চিকিৎসা ও শিক্ষা নিয়ে আমার কাজ চলল।
একদিন মঙ্গু মীনা নামে এক বৃদ্ধ কৃষক আমাকে বললেন, “আমাদের ওষুধের দরকার নেই, শিক্ষার দরকার নেই। আমাদের প্রথমে জল দরকার।” আলওয়ারের অন্যান্য গ্রামের তুলনায় গোপালপুরার লোকেরা তীব্র জল সংকটের মুখোমুখি হতেন। জমি ছিল সম্পূর্ণ অনুর্বর ও জনশূন্য। আমি তাঁকে বলেছিলাম যে আমি জল সংরক্ষণ সম্পর্কে কিছুই জানি না। তিনি বললেন, আমি তোমাকে শেখাব। তা আপনি তো জানেন, কম বয়েসে আমরা অনেক প্রশ্ন করি, তাই আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি যদি আমাকে শেখাতে পারেন তবে আপনিকাজটা নিজেই কেন করেন না?” অশ্রুসজল চোখে তিনি বলেন, “আমরা নিজেরাই করতাম, কিন্তু যখন থেকে গ্রামে নির্বাচন শুরু হয়েছে, তখন থেকেই গ্রামবাসীরা দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে। তারা আর একসাথে কাজ করে না, বা একটি সাধারণ ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে না। কিন্তু তুমি কোন এক পক্ষের নও। তুমি সবার জন্য।” আমি বুঝতে পারলাম উনি কি বলছেন। তিনি শিক্ষিত না হলেও জ্ঞানী ছিলেন। সেই থেকে আমি জল সংরক্ষণের কাজ শুরু করলাম।
জলের উপর আমার সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ নিতে মাত্র দুই দিন সময় লেগেছিলো। মঙ্গু কাকা আমাকে গ্রামের 25টি শুকনো কূপে নিয়ে যেতেন এবং আমাকে 80 থেকে 150 ফুট নিচে নামিয়ে দিতেন, পৃথিবীর পেট দেখতে। আমি কূপের বিভিন্ন ধরণের ফাটল দেখতাম আর বুঝতে পারতামকীভাবে আমরা সূর্যের দ্বারা চুরি হওয়া থেকে জল বাঁচাতে পারি। যদিও এই সূর্যই আমাদের বৃষ্টিপাত বা জল দেয়, রাজস্থানে সেই সূর্য জলকে বাষ্পে পরিণত করে সব জল চুরি করে নেয় । আমার কাজ ছিল জল সংগ্রহ করার উপায়গুলি চিহ্নিত করা এবং জল পৃথিবীর পেটে পৌঁছানো, যাতে তা বাষ্পীভূত না হয়।
গোপালপুরায় জোহাদ তৈরি করে আমি ঠিক এটাই করেছিলাম। মাত্র এক বর্ষার পর, কূপ এবং ভূগর্ভস্থ জলরাশি রিচার্জ হতে শুরু করে। সেই জল শুকিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ঝর্ণাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে। আমরা ভূগর্ভস্থ জলরাশি রিচার্জ করেছি। এই ধরনের কাজ অন্যান্য গ্রাম এবং রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে 12টি নদী পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, যা এখন বহুবর্ষজীবী হয়ে উঠেছে।
গোপালপুরা থেকে অন্য গ্রামে কীভাবে কাজ শুরু করলেন? এবং আপনি এই অঞ্চলে জল সংরক্ষণ কাজের কী প্রভাব দেখেছেন?
যখন গ্রামে জল ফিরে এল, গ্রামবাসীরা যারা কাজের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিলো, তারা আবার গ্রামে ফিরে আস্তে শুরু করলো, সেখানে বিপরীত মাইগ্রেশন হয়েছিল। তারা আবার জমিতে চাষ শুরু করে, এবং যখন তাদের প্রথম ফসল হয়, তখন গ্রামবাসীরা তাদের সমস্ত আত্মীয়দের জানায় যে তারা কীভাবে জল পেতে এবং চাষ শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। সেই আত্মীয়রা আমাকে তাদের গ্রামে আমন্ত্রণ জানাতে লাগল। গোপালপুরা থেকে জল সংরক্ষণের কাজ করৌলি, ধোলপুর, সাওয়াই মাধোপুর, ভরতপুর ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে। আমি তিন ধরনের যাত্রা শুরু করেছি: প্রথমটি ছিল ‘জল বাঁচাও জোহাদ বানাও’ (জল বাঁচান, জল সংগ্রহের অনুশীলন); দ্বিতীয়টি ছিল ‘গ্রাম স্বাবলম্বন’ (গ্রাম স্বনির্ভরতা); আর তৃতীয়টি ছিল ‘পেড় লাগাও পেড় বাঁচাও’ (গাছ লাগাও, গাছ বাঁচাও)। এই যাত্রাগুলির মাধ্যমে, এবং বিদ্যমান সামাজিক নেটওয়ার্কগুলি ব্যবহার করে, আমরা নিজেদের কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছি।
শীঘ্রই এই অঞ্চলের মানুষ এই কাজের প্রভাব দেখতে শুরু করে। করৌলিতে লোকেরা অসহায় এবং বেকার ছিল এবং বেআইনী কার্যকলাপে জড়িত হতে বাধ্য হয়েছিল। গ্রামে জল ফিরে আসতে দেখে তারা জল সংরক্ষণের কাজ শুরু করে এবং তাদের কৃষিকাজ পুনরুজ্জীবিত করে।
এ অঞ্চলে বনভূমির আয়তন 2শতাংশ থেকে বেড়ে 48 শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জয়পুরে ঠিকাদারদের জন্য ট্রাক-লোডার হিসাবে কাজ করতে যেই লোকেরা আগে এই গ্রামগুলি ছেড়েছিল, তারা এখন নিয়োগকর্তা। তাদের ফসল পরিবহনের জন্য তারা এখন ঠিকাদারদের কাজ দেয়। তারা এখন সেই লোকদের নিয়োগ করছে যাদের জন্য তারা আগে নিজেরা শ্রম করত।
জল সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র জলবায়ুর ওপর। এর আগে, আমরা আরব সাগর থেকে মেঘ আমাদের গ্রামের উপর দিয়ে যেতে দেখতাম, কিন্তু বৃষ্টি হতো না যেহেতু এলাকায় সবুজ আচ্ছাদন কম ছিল, এবং খনি এবং শুষ্ক এলাকা থেকে তাপ এই মেঘগুলিকে ঘনীভূত হতে বা বৃষ্টিপাত করতে দিতো না। এখন তাদের উপর তৈরি সবুজ এবং মাইক্রো-মেঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। আরব সাগরের বৃষ্টির মেঘগুলি উল্টো দিকে বয়ে না গিয়ে এই মাইক্রো-ক্লাউডগুলির সাথে মিশে যায় এবং এখানে বৃষ্টি নিয়ে আসে। সবুজের কারণে মাটি ও বাতাসে আর্দ্রতা থাকায় তাপমাত্রাও কমেছে। এই অঞ্চলে আমাদের জল সংরক্ষণের কাজ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি কে প্রায় মুছে ফেলেছে।

ছবির ক্যাপশন: ইলাস্ট্রেশন: আদিত্য কৃষ্ণমূর্তি
এই কাজে আপনি কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। গোপালপুরায়, সেচ বিভাগ সেচ ও নিষ্কাশন আইন 1954-এর অধীনে আমাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করেছিল, এই বলে যে আমরা ‘তাদের’ জল ব্লক করছি। এখন যদি কারো খামারের উপর বৃষ্টি পড়ে তাহলে সেই পানি কার? কৃষক নাকি বাঁধের? আমি তাদের বলেছিলাম, “চাষের জমিতে পড়া বৃষ্টির জল যদি কৃষকের না হয়ে, তাহলে আপনারা বৃষ্টি বন্ধ করিয়ে দিন। গ্রামে যেন কোনো বৃষ্টির জলই না আসে।” আমরা অন্য কারো জল আটকাইনি। আমরা শুধু বৃষ্টির জল সংগ্রহ করছিলাম যা চাষের জমিতে পড়েছিল। আমাদের স্লোগান ছিল, “খেত কা পানি খেত মে ,গাঁও কা পানি গাঁও মে” (চাষের জমির জল চাষের জমিতে, গ্রামের জল গ্রামে)। একটি গ্রাম তখনই স্বনির্ভর হতে পারে যখন তার নিজস্ব পানি থাকবে। আর সেই জলই দেয় সুখ, আত্মবিশ্বাস, গর্ব।
সরকারের আসল সমস্যা এইটা ছিল যে আমরা অল্প বা বিনা খরচে বাঁধ নির্মাণ করছি। একই কাজ করার জন্য তারা কোটি কোটি টাকা বাজেট করবে এবং ঠিকাদার নিয়োগ করবে। তারা ভয় পেয়েছিল যে তাদের দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
আপনি আগে যে বিপরীত মাইগ্রেশনের কথা বলেছেন তা কোভিড-১৯ মহামারীর বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়ে আপনার কি ধারণা?
আমি মনে করি কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও এর কিছু ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। এটি জনগণকে তথাকথিত বিকাশের নামে বিনাশ সম্পর্কে সচেতন করেছে—উন্নয়নের নামে সরকার কিভাবে সব ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত, উন্নয়ন কেবল বিধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি এবং বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে। COVID-19-এর কারণে যে মানুষরা শহরে কাজ হারিয়ে ঘরছাড়া হয়ে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন, এটি তাদের বিপ্লব। কিন্তু বিপ্লবই যথেষ্ট নয়; তাকে পরিবর্তনের জন্য কর্মের সাথে একত্রিত করতে হবে এবং পুনর্জীবনে রূপান্তরিত করতে হবে।
এর অর্থ হল আমাদের যা আছে তা থেকে গ্রামে সমৃদ্ধি আনার উপায় খুঁজে বের করতে হবে: প্রকৃতি। আমাদের মাটি এবং জল সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, প্রতিটি বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ, আমাদের নিজস্ব সার তৈরি করা ইত্যাদি শুরু করতে হবে। আমরা আর উন্নয়ন চাই না, চাই প্রকৃতির, মানবজাতির পুনরুজ্জীবন।
এই পুনরুজ্জীবন সবার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং স্বনির্ভরতার পথ প্রশস্ত করবে। স্বনির্ভরতা, বা আত্মনির্ভরতা, সরকার যে বিষয়ে কথা বলে তা থেকে আসবে না। আত্মনির্ভরতা হাওয়া সে নাহি আতি হ্যায়; আত্মনির্ভরতা মিটি সে শুরু হোতি হায় (আত্মনির্ভরতা হাওয়া থেকে আসে না, মাটি থেকে আসে)। এটি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আসে যা তাদের গ্রামেই কাজ খুঁজে পেতে এবং জীবনের প্রয়োজনীয়তাগুলির জন্য লড়তে সক্ষম করে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিকাজ, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গ্রামগুলির নিজস্ব জল রয়েছে৷ একটি গ্রাম তখনই স্বনির্ভর হতে পারে যখন তার নিজস্ব পানি থাকবে। এবং শুধুমাত্র যখন গ্রামগুলি স্বনির্ভর এবং স্ব-শাসিত ইউনিট হয়ে উঠবে, তখনই ভারত একটি সত্যিকারের প্রজাতন্ত্র হয়ে উঠবে।
আপনি কীভাবে ভারতের বাকি অংশে শহর এবং গ্রাম দুটিতেই জল এবং জল সংরক্ষণের গুরুত্বের বার্তা পৌঁছচ্ছেন?
আমাদের জাতীয় পর্যায়ে একটি সমষ্টি আছে, যার নাম রাষ্ট্রীয় জল বিরাদরি। অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এর উপস্থিতি রয়েছে। লকডাউন চলাকালীন, আমরা ফোনে কথোপকথন এবং ওয়েবিনার পরিচালনা করেছেন। নানান লোকের কাছে আমাদের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছি এবং তাদের নিজেদের অঞ্চলে এটি গ্রহণ করতে বলেছি। কাজটি ইতিমধ্যেই ছোট পরিসরে হচ্ছে; এর জন্য আরও শক্তি এবং মানব সম্পদ প্রয়োজন। আরও বেশি লোককে সম্পৃক্ত করতে হবে। শহর থেকে ফিরে আসা লোকজন এ কাজে যুক্ত হতে পারেন।
শহরের মানুষদের বুঝতে হবে যে তাদের কলের জলগ্রাম থেকে আসে। এই জল কেড়ে নিলে আমরা গ্রামের মানুষকে তাদের জীবিকার উপায় থেকে বঞ্চিত করব এবং তারা শহরে আসতে বাধ্য হবে। শহুরে বাসিন্দাদের তাদের জল ব্যবহারে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে, পাশাপাশি জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অনুশীলন করতে হবে। আমাদের শহরগুলিতে জরুরীভাবে জল সাক্ষরতা আন্দোলনের প্রয়োজন, এবং সেটা শুধু সরকার করতে পারে। ভারতীয় শহুরে ভবিষ্যত একটি বিপজ্জনক দিকে এগোচ্ছে। COVID-19 পরের বিপরীত মাইগ্রেশন শহুরে অবকাঠামোর উপর চাপ কিছুটা কমিয়েছে, তবে আমাদের শহুরে জনসংখ্যাকে শিক্ষিত করা চালিয়ে যেতে হবে।
অন্যদিকে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আমাদের চেয়ে জীবনের অন্যান্য উপাদানের সাথে পানির সম্পর্ক ভালো বোঝে। তারা জানে যে জল ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়, এবং তাদের সংরক্ষণ করার ইচ্ছা আছে। তারা এটাও জানে যে যখন পানির তীব্র সংকট হয় তখন তারাই বাস্তুচ্যুত হয়। কিন্তু তারা যা করতে পারে তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং আমাদের সমর্থন প্রয়োজন।
সরকার কি ধরনের সহায়তা দিতে পারে?
সরকার সব করতে পারে। যারা গ্রামে ফিরে এসেছেন তাদের কাজ প্রদান করতে এবং জল সংরক্ষণের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করতে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (MGNREGA) এর 70,000 কোটি টাকা ব্যবহার করতে পারে । সরকার স্থানীয় রিসোর্স ম্যাপিং করার জন্য লোকেদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে, একটি গ্রামে কী কী সংস্থান রয়েছে এবং কীভাবে সেগুলি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যবহার করা যেতে পারে তা মূল্যায়ন করতে পারে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা ভারত সরকারকে জরুরিভাবে করতে হবে তা হল আমাদের নদীগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা। রাষ্ট্রীয় জল বিরাদরি 100টিরও বেশি নদীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কাজ করেছে, যার ফলে 12টি নদী বহুবর্ষজীবী হয়ে উঠেছে। আমরা সারা দেশে কর্মরত লোকদের প্রশিক্ষিত করেছি, কিন্তু সরকার আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না। তাদের আত্মনির্ভরতার স্লোগান নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে যদি সিরিয়াস হতো ,তাহলে সবকিছুর আগে তারা আমাদের সাথে কথা বলত। টিবিএস হিসাবে, আমরা 10,600 বর্গ কিলোমিটারের বেশি জমিতে জল সংরক্ষণের জন্য 11,800টি পুকুর এবং অন্যান্য কাঠামো তৈরি করেছি, সরকারের কোনও সাহায্য বা তাদের কাছ থেকে এক পয়সা ছাড়াই। আমরা সমাজের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এটা করেছি। আমাদের চেয়ে স্বাবলম্বী কেহতে পারে? কিন্তু সরকার কখনো আমাদের সাথে কথা বলে না, বলবেওনা।
Related article: Women bear the burden of India’s water crisis
জল সংরক্ষণে আপনার কাজ করার সময়, আপনি অবশ্যই স্থানীয় রাজনীতির ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আপনি সেটা কীভাবে সামলান?
আমি সেই রাজনীতির শিকার নই; আমি সেই রাজনীতি গ্রহণ করি, এগিয়ে যাই। আমি যখন জল সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছি তখন আমি জানতাম যে ক্ষমতাবানরা তাদের অধিকার দাবি করবে। যখন কেউ গোপনে কাজ করার চেষ্টা করে তখন সমস্যা হয়। আমি আমার কাজ সম্পর্কে সর্বদা খোলামেলা থেকেছি, গ্রামসভায় সমগ্র সম্প্রদায়ের সাথে সিদ্ধান্ত নিতাম এবং তাদের কাছ থেকে সেই সিদ্ধান্তগুলি লিখিত ভাবে পেতাম। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ছিল। তাই পরে কেউ ঝামেলা সৃষ্টি করলে গোটা গ্রাম তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের মধ্যে দোল বাঁধাবাঁধি হলেই রাজনীতির সৃষ্টি হয়। তাই আমি কোনো দোল বাঁধতে দিইনি।
ক্ষমতা আর রাজনীতির এই লড়াইতে এখন ধর্মও যোগ দিয়েছে। প্রত্যেকের ধর্ম প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, পরিবেশ রক্ষার আদর্শ দিয়ে শুরু হয়। প্রতিটি দেবতাকেবল পাঁচটি তত্ত্বের মিশ্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়, যে মিশ্রণ জীবন সৃষ্টি করে: পৃথিবী, আকাশ, বায়ু, আগুন এবং জল। সমস্ত ধর্ম এইভাবে শুরুহয়ে, কিন্তু যখন কিন্তু মানুষ যখন প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে বেশি সংগঠনকে শ্রদ্ধা করে, তারা ক্ষমতার লড়াইতে মেতে ওঠে এবং ক্ষুদ্র রাজনীতির লড়াই শুরু করে।
আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে আমি, রাজেন্দ্র সিং, ক্ষমতা নিয়ে খেলা করে এমন কোনো দল বা সংগঠন গড়ে তুলিনি। আমি শুধু প্রকৃতির পুনরুজ্জীবনের জন্য কাজ করেছি, এবং আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তা চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের গ্রাম, আমাদের দেশ, আমাদের পৃথিবী আরও ভাল হয়ে উঠতে পারে।
যখন আমি চলে যাব, অন্য লোকেরা প্রয়োজনে সেই কাজটিএগিয়ে নিয়ে যাবে, বা প্রয়োজন না হলে তারা করবে না। রাষ্ট্রীয় জল বিরাদরি কোনো সংগঠন নয়; এটি একটি ফোরাম, যা সম্প্রদায় দ্বারা গঠিত। সম্প্রদায় যতদিন চাইবে ততদিন এটি চালু থাকবে। যখন দরকার হবে না, তখন এর অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে।
পুনরুজ্জীবনের কাজ সনাতন , চিরন্তন। এটি কখনই অবলুপ্ত হবে না; এটি প্রতিবার একটি নতুন সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করবে।
- জোহাদ, বা একটি পারকোলেশন পুকুর, একটি ঐতিহ্যগত জল সঞ্চয় কাঠামো যা বৃষ্টির জল সংগ্রহ করে, যা পানীয়, ধোয়া, স্নান, পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জল এবং কাছাকাছি কূপগুলি রিচার্জ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
—
আরও জানুন
- জলের অধিকারের জন্য সম্প্রদায়ের সংগ্রাম এবং জল সংরক্ষণের জন্য তাদের প্রচেষ্টার উপর এই সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র ‘পুনরুত্থান‘ দেখুন।
- ওয়েবিনারটি দেখুন, যেখানে রাজেন্দ্র সিং জল-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে কথা বলেছেন যেগুলি আমরা বর্তমানে মোকাবেলা করছি, এবং সেগুলির সম্ভাব্য সমাধানগুলি।
- গঙ্গা নদী পরিষ্কার করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার ফাঁক-ফোকর সম্পর্কে রাজেন্দ্র সিং-এর মতামত পড়ুন এবং আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।